আনন্দ-অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে বেদনাদায়ক
সোনার রেকর্ড দাম, ভরি-১ লাখ ৮২ হাজার, সাধারণ মানুষের সোনা কেনার সীমাবদ্ধতা

স্টাফ রিপোর্টার : বিয়ের আর মাত্র সাতদিন বাকি আছে আর্নিকার (ছদ্মনাম)। মন খারাপ করে আছে বাবার ওপর। সারাটা দিন মনমরা হয়ে থাকে। বিয়ের ব্যাপারে কোন উচ্ছ্বাস নেই। মন খারাপের কারণ জেনে বাবারও মন খারাপ। বড় দুই বোনের বিয়ের সময় বাবা তাদের বিয়েতে পাঁচ ভরি সোনার গহনা দিয়ে তাদের সাজিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়েছেন।
কিন্তু এবার সবচেয়ে ছোট মেয়েটির বিয়ের সময় সোনা কিনেছেন দুই ভরি। তা দিয়ে হাতের একটা বালা ও কানের একটা ছোট্ট দুল হলেও গলার মালা পড়তে হবে ইমিটিশনের। দুই ভরি সোনার গহনা কিনতে ব্যয় হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা। বাদবাকি খরচ মিলিয়ে এই আনন্দ-অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার মেটানো এই মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে। সোনার এই রেকর্ড দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের সোনা কেনার সীমাবদ্ধতা আরও বেড়ে গেল। যে হারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে, তাতে করে ২০২৬ সালে স্বর্ণের ভরি দুই লাখের কাছকাছি পৌঁছাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন মধ্যবিত্তরা।
লাফিয়ে লাফিয়ে সোনার দাম বাড়তে বাড়তে একেবারে রেকর্ড জায়গায় পৌঁছেছে। গত সোমবার দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম উঠেছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮১০ টাকা। স্বর্ণের এই দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত মঙ্গলবার থেকে নতুন দাম দেশের বাজারে কার্যকর হয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে ব্যবসা করাই বেশ সমস্যা হবে বলে মনে করছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) তথ্যমতে, ২০০০ সালে দেশে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি ছিল ৬ হাজার ৯০০ টাকা। ২০১০ সালে তার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায়। এক দশক পর ২০২০ সালে ধাপে ধাপে স্বর্ণের দাম বেড়ে হয় প্রতিভরি ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা। এরপর করোনা ভাইরাস মহামারি ও পরবর্তী সময় মিলিয়ে গত ৪ বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ভরিতে ৭৫ হাজার টাকা।
আরও পড়ুনসর্বশেষ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে স্বর্ণের ভরি ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত সোমবার পর পর দুই দফা সোনার দাম বেড়ে বর্তমান মূল্য ১ লাখ ৮২ হাজার ৮১০ টাকা হয়। সে হিসেবে দেড় বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ভরিতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আহনাফ হোসেন জানান, আগে দেখতাম যে কোন নিকট আত্মীয়ের বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সোনার আংটি নয়তো গলার চেইন উপহার দেওয়ার একটা রীতি ছিল। এটা মূলত তাদের ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের কথা ভেবেই উপহার দেওয়া হতো। কিন্তু দাম বাড়ায় এ প্রথা একদমই উঠে গেছে। এখন গহনা দেওয়ার বদলে টাকা দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে।
বগুড়ার শহরের নিউ মার্কেট ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বর্ণের ব্যবসা করে আসছেন আল আমিন জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশে গিনি সোনার দাম ছিল দেড়শ’ টাকা। ২০২৫ সালে এসে দেড়শ’ টাকায় এক কেজি মরিচ হলেও সে সময়ে মানুষ ঐ দামে সোনা কিনতে দুই চারবার ভাবতো। তবে বর্তমানে যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে করে বছর খানেকের মধ্যে প্রতিভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মন্তব্য করুন