ভিডিও রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

শিশুমৃত্যু ঠেকানো জরুরি

শিশুমৃত্যু ঠেকানো জরুরি, প্রতীকী ছবি

যতই দিন যাচ্ছে সমাজে শিশু নির্যাতনের হার বাড়ছে। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার এখনো অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অসচেতনতা। কেবল নির্যাতন নয়, শিশু হত্যার সংখ্যাও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী দেখা যায় বগুড়া শহরের নিশিন্দারা ধমকপাড়া থেকে মাহাদি হাসান নামে চার বছর বয়সী এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে পুলিশ তার লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়ে দেয়।

শিশুটি একদিন আগে থেকে নিখোঁজ ছিল। এ ঘটনায় স্থানীয় জনতা তাহমিনা খাতুন নামে এক নারীকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সেই সাথে ওই নারীর ঘর থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। এতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। নিহত শিশু মাহাদি হাসান নিশিন্দারা ধমকপাড়ার হোটেল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের ছেলে।

এদিকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় নিখোঁজের ১৩ দিন পর সেপটিক ট্যাংক থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় তাবাসসুম (৬) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার সকালে ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানাধীন দাঁতমারা ইউনিয়নের বড় চেতুয়া গ্রামে সেপটিক ট্যাংকে বস্তাবন্দি অবস্থায় স্থানীয় লোকজন লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

নিহত ওই শিশু একই এলাকার আমান হোসেনের মেয়ে। এ ছাড়াও রংপুরে মাদরাসার পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে সিয়াম নামের এক শিশুর, ঠাকুরগাঁওয়ে লাবন্য আকতার নামে এক স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে নিখোঁজের ৫ দিন পর লাবণ্য আকতার (৫) নামে এক স্কুল ছাত্রীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কোষডাঙ্গীপাড়া গ্রামে আখ ক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। থানা পুলিশ জানায়, চোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেনের কন্যা ও কোষামন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্রী লাবণ্য আকতার গত ২৩ নভেম্বর বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে বাড়ির পাশে আখ ক্ষেতে তার মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয় লোকেরা। পীরগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়, এটি হত্যাকান্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার রহস্য উদ্ধারে কাজ করছেন তারা।

নিছক পারিবারিক কলহের কারণে বা অপহরণ করে মুক্তিপণের দাবিতে শিশু হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। এসব খবর আমাদের ফের সেই পুরনো প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে- এ কেমন নৃশংসতা সমাজকে গ্রাস করছে? আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার স্েঙ্গ দেখছি, মানবিকতার উৎকর্ষ সাধন দূরে থাক- স্বাভাবিক বিবেচনাবোধও হারিয়ে ফেলে মানুষ শিশু হত্যা করছে নিষ্কম্প হাতে।

আরও পড়ুন

শিশু হত্যা বা নির্যাতন সম্পর্কে মহানবী (সা) এর ভাষ্য : ইসলামে শিশু ও নারী নির্যাতন দমনে শাস্তির নির্দেশনা আরও কঠোর। বিশেষত শিশু নির্যাতনকে ইসলাম জঘন্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে। কারণ শিশুর প্রতি স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসাই ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। এটা সত্য, সমাজের একশ্রেণির বর্বর পাষন্ড মানুষের হাতে অনেকের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ছে, অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। এমনকি শিশুর জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ছে, অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে।

সমাজে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ঠুনকো কারণে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আপনজনের হাতেও শিশুর জীবন চলে যাচ্ছে। অথচ শিশুর নিরাপত্তা  নিশ্চিত করা সমাজ তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কারণ আমাদের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ কান্ডারি। শিশুর সুস্থ বিকাশ কীভাবে হবে, কীভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের নতুন ভাবে ভাবা উচিত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের বর্বরোচিত নিষ্ঠুর ঘটনা কেন বারবার ঘটছে এটাই বড় প্রশ্ন। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারক, সমাজপতি, বুদ্ধিজীবী ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিকদের গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। আমরা সেই আহবানই জানাই।দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং এমন বর্বর ও ঘৃণ্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার আদমদীঘিতে বিভিন্ন মামলায় নারীসহ সাত জন গ্রেপ্তার

১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করলে যে পুরস্কার

শীতেও প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি

বগুড়ার আদমদীঘিতে জমি নিয়ে বিরোধে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই

বগুড়ার শেরপুরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার