নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:৪১ দুপুর
চোরাচালানে অভিনব পন্থা
পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকছে অবৈধ বিদেশি সিগারেট
সীমান্ত থেকে রাঙামাটির মানিকছড়ি দিয়ে ট্রাক যাচ্ছিল। ট্রাকে জাম্বুরা ফল। চেকপোস্টে ট্রাকটিতে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাম্বুরা ফলের বস্তার সাথে ভারতীয় সিগারেটের প্যাকেটভর্তি ৩৫টি বস্তা উদ্ধার করা হয়।
আমদানি করা অন্য পণ্যের পাশাপাশি কখনো ট্রাকে, কখনো নৌকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় অবৈধভাবে ঢুকছে ভারতীয় সিগারেট। পরে চট্টগ্রাম হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া এই চোরাচালান থামছে না।
সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সিগারেট দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন পথ অবলম্বন করছে চোরাকারবারিরা। ফলের ট্রাক, মাছ ধরার নৌকায় এসব অবৈধ সিগারেট দেশের বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে চোরাকারবারিরা। এছাড়া বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ বিদেশি সিগারেট।
সম্প্রতি রাঙামাটি থেকে পাচারের সময় কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় সিগারেট জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাঙামাটির মানিকছড়ি চেকপোস্ট দিয়ে যাওয়ার সময় জাম্বুরা ভর্তি একটি ট্রাক তল্লাশি চালালে ৩৫টি বস্তাভর্তি বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চোরাই সিগারেট উদ্ধার করা হয়। ট্রাকটিতে জাম্বুরা দিয়ে ঢেকে এসব চোরাই সিগারেট পরিবহন করছিল চোরাকারবারিরা। এ সময় ট্রাকচালক রোমান ও তার সহকারি মঞ্জুরুল আলমকে আটক করা হয়।
গত সেপ্টেম্বরে একটি মাছ ধরার নৌকায় বিদেশি সিগারেটের চালান জব্দ করে রাঙামাটি সদর সেনা জোন। কাপ্তাই হ্রদের রাখা ওই পরিত্যক্ত নৌকা থেকে ১১ হাজার ৯৭০ প্যাকেট ‘অরিস সিলভার’ এবং ৩৪ হাজার ৮৩০ প্যাকেট ‘ওমেগা’ সিগারেট আটক করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য মোট ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
জানা যায়, রাঙামাটির বনরূপার সমতাঘাট, ডিসি বাংলো এলাকা, তবলছড়ি, কর্মচারি কলোনী, ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন এলাকা, রিজার্ভ বাজার, শরীয়তপুর, পুরানবস্তি এলাকায় এসকল অবৈধ সিগারেট মজুদ করে রাখা হয়। বস্তায় ভরে স্থানীয় দেশি ইঞ্জিনবোটে করে রাঙামাটিতে নেওয়া হয়। এসব নৌকা দেখলে মনে হবে মাছ ধরার নৌকা।
এদিকে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে প্লাস্টিক ড্রামের ভেতর বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে নিয়ে আসা অবৈধ ১ হাজার ৪১৫ কার্টন বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। যার বাজার মূল্য ২১ লাখ টাকা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটিস্থ বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোঃ আনোয়ার লতিফ খান জানিয়েছেন, চোরাচালান বন্ধে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, চারটি ব্যাটালিয়ানের পরিচালনাধীন ৩০টি বিওপি’র মাধ্যমে রাঙামাটির সীমান্ত অঞ্চলে আমাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর সাথেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি, যাতে করে তাদের সীমান্ত ব্যবহার করে আমাদের অভ্যন্তরে কেউ কোনো কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে।
তিনি বলেন, আমরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারিকে আটক করেছি, এছাড়াও অবৈধ সিগারেট আসা বন্ধে আমরা আরো তৎপরতাবৃদ্ধি করবো।
গত ১ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাইভাবে আসা প্রায় ৬৭০ কার্টুন, ৯৭ হাজার ৮০০ প্যাকেট ও ৩৫ কন্টেইনার/বস্তা অবৈধ বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি ৩ লাখ টাকা।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, রাঙামাটির বিশাল সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তারপরও নিজেদের সর্বোচ্চটুকু প্রয়োগ করে গত কয়েকমাসে যে পরিমাণ সিগারেট আটক করা হয়েছে সেটি বিগত ১৫ বছরেও কেউ করতে পারেনি।
বছরব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতার পরও বন্ধ হচ্ছে না অভিনব পন্থায় আনা সিগারেটের চোরাচালান। এতে সরকার প্রতিবছর হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। তাই চোরাচালান ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলার কঠোর তৎপরতা বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন